হামাসের চাপের মধ্যে দোহায় প্রতিনিধিদল পাঠাবে ইসরায়েল

ইসরায়েল রবিবার দোহায় একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আরো আলোচনা করার জন্য। অন্যদিকে হামাসও যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা তাৎক্ষণিকভাবে শুরুর আহ্বান জানিয়েছে, যা স্থায়ীভাবে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে বলে তারা আশা করছে।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামাসের প্রতিনিধিদল সপ্তাহান্তে কায়রোয় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। তারা অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ‘কোনো শর্ত বা বিধি-নিষেধ ছাড়া’ জরুরি মানবিক সহায়তা প্রবেশের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।
হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা মাহমুদ মারদাভি বলেন, ‘হামাস দখলদারদের (ইসরায়েল) বাধ্য করার জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছে, যাতে তারা অবিলম্বে সমঝোতার আওতায় দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করে।’ এটি যুদ্ধের স্থায়ী অবসানের পথ তৈরি করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মারদাভি আরো বলেন, হামাসের দ্বিতীয় ধাপের মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজা থেকে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার, ইসরায়েলি অবরোধের অবসান, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পুনর্গঠন ও আর্থিক সহায়তা। এ ছাড়া মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনার পর হামাসের মুখপাত্র আব্দুল লতিফ আল-কানুয়া বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ইঙ্গিতগুলো ইতিবাচক।’
অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, তারা সোমবার দোহায় একটি প্রতিনিধিদল পাঠাবে। ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, সরকারের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা রবিবার এ বিষয়ে আলোচনা করবে।
ইসরায়েল বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়িয়ে মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত রাখতে চায়। এর আগে ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল।
প্রাথমিক যুদ্ধবিরতির সময়কাল ১ মার্চ শেষ হয়, যা ছয় সপ্তাহ ধরে তুলনামূলক শান্ত পরিবেশ বজায় রেখেছিল। এই সময়ের মধ্যে হামাস ২৫ জীবিত জিম্মি ও আটটি মৃতদেহ হস্তান্তর করেছিল, বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় এক হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছিল।
যুদ্ধবিরতিটি গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা ভয়াবহ যুদ্ধ কার্যত স্থগিত করেছিল, যেখানে ইসরায়েলের লাগাতার সামরিক অভিযানের কারণে প্রায় পুরো জনসংখ্যা বাস্তুচ্যুত হয়। পাশাপাশি গাজায় জরুরি খাদ্য, আশ্রয় ও চিকিৎসা সহায়তার প্রবাহও নিশ্চিত হয়েছিল। ইসরায়েল ফের সেই প্রবাহ বন্ধ করার পর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা দেশটিকে ‘ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের’ অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন।
গৃহহীন ফিলিস্তিনি বিধবা হানিন আল-দুরা জানান, তাঁবু পাওয়ার আগে তিনি ও তার সন্তানরা কয়েক সপ্তাহ ধরে রাস্তায় কুকুর ও ইঁদুরের সঙ্গে কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি পরিবারের উপার্জনকারী, এটা ছিল হতাশাজনক এবং রাতে একটুও ঘুমাতে পারতাম না।’
এদিকে গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি অবশিষ্ট সব জিম্মিকে মুক্তি না দেওয়া হয়, তবে গাজায় আরো ধ্বংস নামিয়ে আনা হবে। তিনি এটিকে হামাস নেতাদের জন্য ‘শেষ সতর্কবার্তা’ বলে উল্লেখ করেন।
ট্রাম্প গাজার জনগণকেও হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে, তবে কেবল যদি তোমরা জিম্মিদের আটকে না রাখো। যদি তা করো, তবে তোমরা মরবে!’
হামাস অবশ্য বলেছে, ট্রাম্পের হুমকিগুলো কেবল ইসরায়েলকে তাদের সমঝোতার শর্ত উপেক্ষা করতে উৎসাহিত করবে।
অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসন এই প্রথমবারের মতো হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। যদিও ১৯৯৭ সালে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেনি। ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হাতে জিম্মি হওয়া ২৫১ জনের মধ্যে ৫৮ জন এখনো গাজায় রয়েছে, যার মধ্যে পাঁচজন মার্কিন নাগরিক। চারজন মার্কিন জিম্মিকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে এবং ইদান আলেকজান্ডার নামের একজনকে জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগেই এক বিতর্কিত পরিকল্পনা উত্থাপন করেছিলেন, যাতে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের নির্বাসনে পাঠানোর কথা বলা হয়েছিল। এর জবাবে আরব নেতারা একটি বিকল্প প্রস্তাব দেন। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজা পুনর্গঠনের জন্য একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হবে এবং রামাল্লাভিত্তিক ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আবার অঞ্চলটি শাসন করবে। ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি নিয়ে আরো আলোচনা দরকার, তবে এটি সদিচ্ছার প্রথম পদক্ষেপ।’ এই সপ্তাহে উইটকফ সৌদি আরব সফরে যাবেন, যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও আলোচনা হবে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলায় ইসরায়েলে এক হাজার ২১৮ জন নিহত হয়েছিল, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। অন্যদিকে হামাসশাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক অভিযানে গাজায় অন্তত ৪৮ হাজার ৪৫৩ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগও বেসামরিক নাগরিক। জাতিসংঘও এই পরিসংখ্যানগুলোকে নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচনা করে।