হীরা, পান্না আর জহরতে ঘুরে দাঁড়াবে আফগান অর্থনীতি
এতদিন পপি ফুল চাষ ও আফিম উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল ছিল আফগানিস্তানের অর্থনীতি। কিন্তু আফিম নিষিদ্ধের পর এবার বিকল্প হিসেবে খনিজ ও রত্ন সংগ্রহের ওপর জোর দিয়েছে দেশটির তালেবান সরকার।
মার্কিন বাহিনী আফগান ছেড়েছে বছর তিনেক হলো। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে আফগানিস্তানের প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে তালেবান সরকারের তত্ত্বাবধানে।
বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব বলছে, শুধু আফিমই ছিল দেশটির জিডিপির ৮ শতাংশ। তালেবান সরকার আফিম নিষিদ্ধ করায় কৃষকরা প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। চাকরি হারিয়েছে এই চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত সাড়ে ৪ লাখ মানুষ।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এরইমধ্যে আফগানিস্তানে আফিম চাষ কমেছে ৯৫ শতাংশ।
অর্থনৈতিক এ ঘাটতির সঙ্গে যোগ হয়েছে বিদেশি সাহায্যের অপ্রতুলতা। ২০২১ সালের আগ পর্যন্ত তালেবান এবং দেশটির তৎকালীন সরকারের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র অবকাঠামোগত উন্নতি এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১৪৩ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছে নিজেদের মদদপুষ্ট সরকারকে। এখন এসব সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিকল্প রাস্তা দেখতে হচ্ছে তালেবান সরকারকে।
ভৌগলিকভাবে আফগানিস্তান খনিজ সম্পদ এবং রত্নমণিতে পরিপূর্ণ একটি দেশ।
মার্কিনিরা ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদ আহরণে বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। কিন্তু লাগাতার নিরাপত্তা ঝুঁকি, সরকারি দুর্নীতি, মন্দ অবকাঠামো এবং একের পর এক তৎকালীন আফগান সরকারের নীতিগত ভুল সিদ্ধান্তের কারণে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র।
এবার তালেবান সরকার নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করেছে। আফগানিস্তানের খনিজ খননে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তুরস্ক, কাতার, চীন, রাশিয়া এবং ইরান। এরইমধ্যে উজবেকিস্তানের একটি বেসরকারি কম্পানির সঙ্গে জ্বালানি তেল উত্তোলনের চুক্তি করেছে দেশটির জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়।
চীন তাদের নতুন সিল্ক রোডের পরিকল্পনায় আফগান অর্থনীতির ওপর আলাদাভাবে জোর দিচ্ছে।
আফগানিস্তানের পাঞ্জসির প্রদেশ সবুজ পান্নার জন্য বিখ্যাত। প্রদেশটিতে পান্না উত্তোলন এবং এর ওপর রাজস্ব নির্ধারণের কাজ শুরু করেছে সরকার। তালেবান সরকার বলছে, শুধু পান্না না; রুবি, নীলকান্তমণি, স্বর্ণ, তামা এবং লোহার মতো খনিজ উত্তোলনেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
চুক্তি এবং বিনিয়োগের পাশাপাশি এরইমধ্যে লাইসেন্স প্রদান শুরু করেছে তালেবান সরকার। সবুজ পান্না উত্তোলনে এ পর্যন্ত ৫৬০টি লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে। একইভাবে রুবি উত্তোলনেও দেওয়া হচ্ছে লাইসেন্স।
বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবনুযায়ী, গত দুই বছরে আফগানিস্তানের প্রবৃদ্ধি কমেছে ২৬ শতাংশ। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বর্তমান সরকার খনিজ সংক্রান্ত যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা কার্যকর হলে দেশটির অর্থনীতির চাকা ঘুরতে সময় লাগবে না বলে মত বিশ্লেষকদের।