img

এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বিভাগে নূন্যতম ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকা আবশ্যক। কিন্তু বিজ্ঞান ও বাণিজ্য এই দুইটি বিভাগে শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র দুইজন। এই দুইজন শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য আবার শিক্ষক রয়েছেন ৮ জন। দুইজন শিক্ষার্থীর জন্য ৮ শিক্ষককে বেতন বাবদ বছরে সরকারের ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৭ লাখ টাকা।

ঘটনাটি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের।

স্থানীয় ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনার জেলার হাওরাঞ্চল উপজেলা মোহনগঞ্জের আদর্শনগর বাজারের পাশে সাড়ে ৫ একর জায়গায় ২০১৫ সালে স্থাপিত হয় শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয় নামের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। পরের বছর থেকে পাঠদানের অনুমোদন পায় কলেজটি। কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি সাজ্জাদুল হাসান।

এতে এইচএসসি পর্যন্ত বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য এ তিনটি বিভাগে পড়াশোনা চালু আছে। পাশাপাশি রয়েছে বিএম (কারিগরি) শাখা। কলেজের বিশাল মাঠ, দৃষ্টি নন্দন একডেমিক ভবন, ছাত্র হোস্টেল, ছাত্রী হোস্টেলসহ দ্রুত এসব ভবন গড়ে তোলা হয়।

প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত হয়।

২০২২ সালে ময়মনসিংহ বিভাগে শ্রেষ্ঠ কলেজ নির্বাচিত হয়। ২০২৩ সালে জেলা পর্যায়ে ও ২০২৪ সালে উপজেলা পর্যায়ে সেরা কলেজ নির্বাচিত হয়। এই কলেজে বর্তমানে ১৫ জন প্রভাষক ও একজন অধ্যক্ষ কর্মরত রয়েছেন। মানবিক শাখায় শিক্ষার্থী রয়েছেন ১৫০ জন ও কারিগরিতে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগে একজন করে মোট দুইজন শিক্ষার্থী রয়েছে।

ওই দুই বিভাগে দুইজন শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য শিক্ষক রয়েছেন চারজন করে মোট আটজন।

বর্তমানে কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থার নাজেহাল অবস্থা দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা কলেজে আসেন না। শিক্ষকরাও নিয়মিত কলেজে যান না। যারা কলেজে যান তারা অলস সময় কাটান। গতকাল সোমবার (২১ অক্টোবর) সরেজমিনে গেলে বাণিজ্য বিভাগের দুইজন শিক্ষক ও একজন শিক্ষার্থী পাওয়া যায়। আর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী কাউকেই পাওয়া যায়নি। তবে মানবিক বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী দেখা গেছে।

বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী মিম আক্তার বলেন, ‘একা একা তো ক্লাস করা যায় না। সহপাঠী থাকলে পড়াশোনায় একটা প্রতিযোগিতা থাকে। আর কোনো শিক্ষার্থী নাই তাই ক্লাস করতেও আগ্রহ পাই না।’

বাণিজ্য বিভাগের প্রভাষক চয়ন গোস্বামী বলেন, ‘এলাকায় একটি মাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয় থেকে যারা পাশ করে তারা মূলত জেলা বা বিভাগীয় শহরের কলেজে গিয়ে ভর্তি হয়। যেহেতু হাওরাঞ্চলের স্কুলগুলোতে বিজ্ঞান-বাণিজ্যের শিক্ষার্থী কম তাই আমাদের কলেজেও ওই দুই বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। চেষ্টা করেও বিজ্ঞান-বাণিজ্যের শিক্ষার্থী বাড়ানো যাচ্ছে না। শিক্ষার্থী নাই তাই ক্লাসও হয় না। শিক্ষকরা কলেজে এসে বিভিন্নভাবে সময় কাটিয়ে চলে যান।’

কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমিনুল হক বলেন, ‘কলেজে বিশাল একাডেমিক ভবনসহ ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল রয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থী সংখ্যা কম। কলেজের মানবিক বিভাগ ও কারিগরি শাখায় যথেষ্ট শিক্ষার্থী রয়েছে। কলেজ শুরুর দিকে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগে ১২/১৪ জন শিক্ষার্থী থাকলেও এখন কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগে একজন করে দুইজন শিক্ষার্থী রয়েছে। আর শিক্ষক রয়েছেন ৮ জন। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের বদলি করে যেসব কলেজে শিক্ষক ঘাটতি রয়েছে সেখানে দিলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। বিষয়টি কলেজ কমিটির সভায় আলোচনায় তুলব।’কলেজের সভাপতি ও মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেজওয়ানা কবির বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর