ইসলামের চার খলিফা যেভাবে ব্যবসা করতেন
ইসলামের প্রথম যুগের মুসলমান সাহাবায়ে কিরাম (রা.) বেশির ভাগ ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন এবং মদিনার সাহাবিরা বেশির ভাগ কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে দ্বিন শুধু ইবাদত করার নামই নয়, বরং দ্বিন হলো ইবাদত ও লেনদেনের সামষ্টিক নাম। যদি কোনো ব্যক্তি বিশুদ্ধ নিয়তে ও সঠিক নিয়মে ব্যবসা ইত্যাদি করে তাহলে আল্লাহ তাকে সওয়াব দান করেন।
তাই ইসলামে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করাও দ্বিনের ওপর আমল করার নামান্তর।
সুতরাং নিম্নে ইসলামের চার খলিফার অর্থনৈতিক জীবনব্যবস্থা কেমন ছিল—তা তুলে ধরা হলো—
আবু বকর সিদ্দিক (রা.)
আবু বকর সিদ্দিক (রা.) কাপড়ের ব্যবসা করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, তিনি ছিলেন কুরাইশদের সর্বশ্রেষ্ঠ বণিক। তিনি সুনৈতিকতা ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী একজন সুপরিচিত ও প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী ছিলেন। (আল ইসাবাহ ফি তাময়িজিস সাহাবা, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৪৭)
উম্মে সালামা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের এক বছর আগে আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ব্যাবসায়িক সফরে বসরা (ইরাক) গিয়েছিলেন এবং এই সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন নুয়াইমান (রা.) এবং সুয়ায়বিত বিন হারমালা (রা.)-ও সঙ্গে ছিলেন।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৭১৯)
আবু বকর সিদ্দিক (রা.) যখন খলিফা হলেন, তখন তার পরের দিনই তিনি সকালে বাজারে যাচ্ছিলেন এবং তাঁর কাঁধে কাপড়ের গাট্টি ছিল, যার মাধ্যমে তিনি ব্যবসা করতেন। পথিমধ্যে ওমর (রা.) এবং আবু উবাইদাহ ইবনে জাররাহ (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়, তখন তাঁরা উভয়ে আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর খলিফা! গন্তব্য কোথায়? তিনি জবাবে বলেন, বাজার। তখন উভয়েই বলেন, আপনি কিভাবে ব্যবসা করবেন? অথচ আপনি মুসলমানদের গভর্নর ও খলিফা। (অর্থাৎ আপনাকে মুসলমানদের বিষয় দেখাশোনা করার এবং তাদের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আপনি এই খলিফার দায়িত্বের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা কিভাবে করবেন?) তখন আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেন, তাহলে আমার পরিবার চলবে কেমন করে?
ওমর (রা.) ও আবু উবাইদাহ ইবনে জাররাহ (রা.) বলেন, আপনি আমাদের সঙ্গে চলুন, যাতে আমরা আপনার জন্য বায়তুল মাল (রাষ্ট্রীয় কোষাগার) থেকে কিছু (বেতন) নির্ধারণ করে দিতে পারি। আবু বকর (রা.) তাঁদের সঙ্গে গেলেন এবং সাহাবায়ে কিরাম তাঁর জন্য প্রতিদিন অর্ধেক ভেড়া ও বার্ষিক দুই হাজার দিনার বেতন নির্ধারণ করা হলো।