img

পাল্টাপাল্টি কোনো কর্মসূচিতে আগ্রহী নয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরা। জোটভুক্ত অন্তত সাতটি দলের শীর্ষ নেতারা কালের কণ্ঠকে বলেছেন, কোনো কর্মসূচি ঘিরে নাশকতা বা সহিংসতার আশঙ্কা থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাজ। ফলে আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচির দিন একাই রাজপথে থাকছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির এই জমায়েত রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

কারণ এই মহাসমাবেশ থেকে বিএনপি সরকার পতনের কর্মসূচির দিকে যাবে বলে আলোচনা আছে। আর আওয়ামী লীগ এ সমাবেশ থেকে নাশকতার আশঙ্কা করছে। তা মোকাবেলায় বড় প্রস্তুতি নিয়ে পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে একই দিন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ ডেকেছে দলটি।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ওপরে যখন বিএনপির এমন কর্মসূচির চাপ, তখন অনেকটা নীরব ১৪ দল।

আওয়ামী লীগের পাশে দেখা মিলছে না মিত্র দলগুলোর। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২৮ অক্টোবর নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। কিছু বিরোধী দল কর্মসূচি দিয়েছে। তারা তাদের মতো পালন করবে।

অন্য কোনো সমস্যা থাকলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সেটা দেখবে। কোনো দলের কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি দেওয়ার কথা ১৪ দল ভাবছে না।’

 

১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতারা জানান, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীতে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার বাস্তবতায় ১৪ দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ায় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে তারা অনেকটা একলা চলো নীতি নেয়।

এ কারণে বিভিন্ন সময় জোটের অভ্যন্তরে টানাপড়েন দেখা দেয়।

 

জাতীয় পার্টি-জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপি এককভাবে তাদের কর্মসূচি দিয়েছে। আওয়ামী লীগও এককভাবে সেটা মোকাবেলা করছে। কোনো দলের পাল্টা কর্মসূচি আমরা দিই না। আমরা আশা করছি, দুই দলের সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে। কর্মসূচি পালন সবার গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু কর্মসূচির নামে সহিংসতা কাম্য নয়।’

জোটের শরিক দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, মাস দুয়েক আগে আগামী নির্বাচন এবং পরবর্তী সময়ে সরকার গঠনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের মনোভাব জানতে চেয়েছিলেন ১৪ দলের একাধিক শরিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। কিন্তু সে বিষয়ে এখনো কোনো স্পষ্ট জবাব পাননি তাঁরা।

বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছি। এ বিষয়ে ১৪ দলের ঘোষিত কর্মসূচি রয়েছে। কিন্তু ২৮ অক্টোবর কোনো কর্মসূচির বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়নি।’

১৪ দলের শরিক একটি বাম দলের শীর্ষ এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ১৪ দল গঠনের সময় কথা ছিল একসঙ্গে নির্বাচন, একসঙ্গে সরকার গঠন। কিন্তু আওয়ামী লীগ একলা চলো নীতিতে চলছে। তারা একসঙ্গে নির্বাচন করলেও এককভাবে সরকার গঠন করছে। ফলে তারা যখন চাপে পড়ছে তখন শরিক দলগুলোকে আন্তরিকভাবে পাশে পাচ্ছে না।

১৪ দলের একাধিক সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার চাপ রয়েছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েও ১৪ দলের শরিকরা বুঝেশুনে এগোচ্ছে। যদিও গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংসদে কড়া কথা বলেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তাঁরা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র নয়, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ চায়। তাঁরা পরাশক্তির বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নিলেও আগামী সরকারে শরিকদের অবস্থান কী হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি আওয়ামী লীগ।

জানতে চাইলে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেন, ‘সব দেখছি, শুনছি। এর বাইরে কিছু বলার নেই।’

এই বিভাগের আরও খবর